দুসস ডেস্কঃ আবাসিক ভবনে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম! ভবনের ছাদের ওপর রেস্টুরেন্ট খুলে সিলিন্ডার গ্যাসে চলে রান্না। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এখন এই দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, ছাদের ওপর রেস্টুরেন্ট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র আশরাফুল ইসলাম জানান, বেআইনিভাবে এসব গড়ে উঠছে। বেশির ভাগেরই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমোদন নেই। আমরা কমিটি করে এসব অনুমোদনহীন ভবনের সব কার্যক্রম সিলগালা করে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিব।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশন বলছে, ভবনের মধ্যে রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আমরা ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমোদন আছে কি না এগুলো চেক করি। রাজধানীতে আবাসিক এলাকায় যেসব রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে এগুলোর কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমরা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স দেই না। ধানমন্ডি এলাকায় আমাদের লাইসেন্স দেওয়া সাধারণত বন্ধ। অথচ সেখানে আবাসিক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও অনেক ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। এমনকি বহু রেস্টুরেন্ট সেখানে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। আবাসিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি দেখে সাধারণত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে রেস্টুরেন্ট আছে অর্ধশতাধিক। এগুলোর অধিকাংশই বহুতল ভবনে অবস্থিত। নানা দেশি-বিদেশি এসব রেস্টুরেন্টে রান্না হয় গ্যাস সিলিন্ডারে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম হয় সেখানে। কিন্তু নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই। শুধু সাতমসজিদ রোডই নয়, বনানী, গুলশান, উত্তরা, মিরপুর থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার অলিগলিতে চলছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। সবগুলোতে রান্নার কাজ চলে সিলিন্ডারে।

বেইলী রোডের যে ভবনটিতে আগুন লাগে, সেখানেও ছিল না রেস্টুরেন্টের অনুমতি। আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এ ভবনে অফিস স্পেস হিসেবে রাজউক থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবনের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল রেস্টুরেন্ট। একটি দোকান ছাড়া অন্য সবগুলোতে খাবারের দোকান ছিল। এসব রেস্টুরেন্টে অনেক গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলো থেকে গ্যাস লিক হয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা। রেস্টুরেন্টের এক দিকে কিচেন তৈরি করে গ্যাস সিলিন্ডারে চলে রান্না; অন্যদিকে চেয়ার-টেবিলের পসরা সাজিয়ে পরিবেশন করা হয় খাবার।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ভবন এখন এমনভাবে তৈরি হচ্ছে সেখান থেকে বের হওয়ার পথ নেই অথবা থাকলেও সেগুলো খুবই সংকীর্ণ। যার কারণে বড় দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে যেসব অফিস বা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের নিজস্ব অগ্নিনিরাপত্তা থাকার পাশাপাশি ভবনটির আলাদা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এতে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন ও পরিপালন একান্ত আবশ্যক। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করছে। তাছাড়া ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করে আমরা একটি নীতিমালা সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। আমরা আশা করব, সরকার দ্রুত এই নীতিমালাটির অনুমোদন দেবে।